Read Time:6 Minute, 41 Second
আল জাজিরা ইংরেজি:
মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত খবর অনুসারে কায়রোর একটি আদালতে বিচারকার্য চলাকালে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসি জ্ঞান হারানোর পর মৃত্যুবরণ করেন।
মুরসি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং আধুনিক মিসরের ইতিহাসের প্রথম (এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র-অনুবাদক) গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর তিনি সেনাবাহিনী কর্তৃক অপসারিত হন, এরপর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
রাষ্ট্রী টেলিভিশন জানিয়েছে, মুরসির (৬৭) বিরুদ্ধে সোমবার আদালতে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে শুনানি চলছিল। মুর্ছা যাওয়ার পর তার দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মুরসির আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন। নিচে তাদের বিবৃতিসমূহ উল্লেখ করা হলো:
কাতারের আমির
কাতারি আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি মুরসির পরিবারবর্গ ও মিসরের জনগণের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি এক টুইটার বার্তায় বলেন:
“আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। আমি তার পরিবারবর্গ ও মিসরীয় জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান মুরসিকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
“আমাদের ভাই, আমাদের শহিদ মুরসির আত্মাকে আল্লাহ শান্তিতে রাখুন,” বলেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, মুরসির সাথে যাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিখ মুরসির আত্মীয়-স্বজন ও সমর্থকদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সারাহ লিয়াহ উইটসন মুরসির মৃত্যুকে “ভয়াবহ কিন্তু পুরোপুরি প্রত্যাশিত” বলে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করেন।
“বিগত কয়েক বছরে আমরা প্রমাণ পাচ্ছিলাম, যে বাস্তবতা হলো তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। যতবার তাকে বিচারকের সামনে দেখা গেছে, তিনি প্রাইভেট মেডিকেল কেয়ার এবং চিকিৎসা সেবার জন্য অনুরোধ করেছেন।” উইটসন এসব কথা আল জাজিরাকে বলেন।
“তিনি পর্যাপ্ত খাবার এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থার অধঃপতন সম্পর্কে মিসর সরকার খুব স্পষ্টভাবেই জানতো। তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওজন হারিয়েছিলেন এবং আদালতে কয়েকবার মুর্ছা গিয়েছিলেন।
“টেলিভিশন, ইমেইল কিংবা বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ ছাড়াই তিনি নির্জন কারাগারে বন্দী ছিলেন,” উইটসন আরো যোগ করেন যে, মুরসির মৃত্যুর বিষয়ে কোন নির্ভরযোগ্য স্বাধীন তদন্ত হবে না “কারণ তাদের (মিসর সরকার) কাজ এবং ভূমিকা হলো নিজেদের সব দোষক্ষালন করা।”
মোহাম্মদ মুরসির ছেলে
মোহাম্মদ মুরসির ছেলে আহমদ একটি ফেসবুক পোস্টে তার বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে লিখেন: “আল্লাহর সামনে, আমার বাবা এবং আমরা সকলে একত্রিত হবো।”
মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য
লন্ডনে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃস্থানীয় সদস্য মোহাম্মদ সুদান মুরসির মৃত্যুকে “পূর্বনির্ধারিত হত্যা” বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি আরো বলেন যে, সাবেক রাষ্ট্রপতিকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, এবং তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে খুব সামান্য তথ্য পাওয়া যেতো।
“বিচার চলাকালে তাকে (মুরসিকে) একটি গ্লাসের খাঁচার মধ্যে রাখা হতো। কেউ তার কথা শুনতে পেতো না, কিংবা তার প্রতি কী হচ্ছে, সেটা জানতেও পারতো না। কয়েক মাস ধরে, অথবা প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময় ধরে তাকে কো চিকিৎসক দেখেন নি। ইতোপূর্বে তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি তার ঔষধ পাচ্ছেন না। এটি পূর্ব নির্ধারিত হত্যা। এটি ধীর মৃত্যু।”
________________________________
মিসরের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে আল জাজিরা ইংরেজি। বাংলাদেশ থেকে আল জাজিরা ইংরেজি ভিজিট করা যায় না। তাই বাংলাদেশি পাঠকদের জন্য হুবহু সেই প্রতিক্রিয়াসমূহ বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হলো। মূল নিবন্ধের লিংক: Mohamed Morsi’s death: World reaction