Read Time:6 Minute, 41 Second
অবিনাশ গদবলে, এশিয়া টাইমস:
আগে থেকেই যেমনটা আশা করা হচ্ছিল, চীন আবারো জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে ভেটো দিয়ে জাতিসংঘের নিষিদ্ধ তালিকায় মাসুদ আযহারকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একটি রেজুলেশন আটকিয়ে দিয়েছে। নিকট অতীতে এরকম “টেকনিক্যাল হোল্ড” হিসেবে চীনের দেওয়া ভেটোসমূহের মধ্যে এটি চতুর্থ। চীনের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায় যে, সন্ত্রাস ভারতের নিজস্ব জাতীয় সমস্যা এবং চীনের বৈশ্বিক “সন্ত্রাস” নীতি ও তার দক্ষিণ এশিয়া নীতির ফারাক এখনো বহাল আছে।
তাছাড়াও, এমনকি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশমীরের পুলওয়ামার সন্ত্রাসী হামলা, যাতে প্রায় ৪১ জন মারা গেছেন, তাতেও ভারতের উদ্বেগের বিষয়ে চীনের অবস্থানে কোন কার্যকর পরিবর্তন আসে নি। এটা থেকে মনে হয় যে উদীয়মান বিশ্ব শক্তি হিসেবে চীনের দায়িত্বশীলতার তুলনায় পাকিস্তানের সাথে “সাগরের চেয়েও গভীর” সম্পর্কই চীনের জাতীয় স্বার্থে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাপী দীর্ঘকাল ধরে চলা “সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ”র সময়ে ভারত সুযোগ কাজে লাগাতে পারে নি। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ সালের হামলার ফলাফলস্বরূপ আমেরিকা তার শত্রু-মিত্রদের মধ্যে স্পষ্ট ফারাক তৈরি করতে “সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ” পরিভাষাটি চালু করেছিলো। ভারত এ যুদ্ধকে বিবেচনা করেছিলো আফগান ও ইরাকে বাস্তব ও কল্পিত শত্রুদের বিরুদ্ধে আমেরিকার লড়াই হিসেবে। এ যুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা পাকিস্তানকে ন্যাটোর বাইরের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিল এবং অন্যদিকে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করার নীতি অব্যহত রেখেছিল। এমনকি পাকিস্তান আমেরিকার তরফ থেকে ভালো রকমের সহযোগিতাও পেয়েছিল, সেসকল সহযোগিতার কিছু অংশ ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃতও হয়েছে, যেমন ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাম্প্রতিকইবমান হামলাতেও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নির্মিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হয়েছে।
এখন চীন আছে পাকিস্তানের পাশে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) মাধ্যমে অর্থই নতুন সম্পর্কের মূল কারণ, যেটি কিনা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মূল ফ্ল্যাগশিপ। চীন কর্তৃক প্রতিশ্রুতিকৃত ৬২ মিলিয়ন ডলার হয়তো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বদলে দেবে না, কিন্তু এটি পাকিস্তানকে নিজেদের স্বার্থ সম্পর্কে নতুন বোধ তৈরি করে দেবে। পাকিস্তানের জন্য, কোন বড় শক্তির খদ্দের রাষ্ট্র হয়েও যে সেখান থেকে ফায়দা হাসিল করার সক্ষমতা যে পাকিস্তানের আছে, সিপিইসি তার উদাহরণ। আর চীনের জন্য, সিপিইসি এমন এক জাদুর গুলি, যেটা সে শুধু পাকিস্তানেই তার স্বার্থ হাসিলে সহযোগিতা করবে না, বরং আফগানিস্তান, ভারত সাগর, ইরান এবং অভ্যন্তরীণভাবে জিনজিয়াঙেও নিজ স্বার্থ হাসিল করতে সহযোগিতা করবে।
দিল্লিতে অনেকেই বিশ্বাস করছিলেন যে, জাতিসংঘের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সে সহসভাপতি হতে চীনকে ভারত যে সহযোগিতা করেছিলো, সেটা মাসুদ আযহারের বিষয়ে চীনের অবস্থান পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। যাই হোক, এটা এখন স্পষ্ট যে বাস্তবে এরকম হয় নি। ভারতের তরফ থেকে যে ইস্যুতে সবচেয়ে ভালো রকমের দর-কষাকষি চীন আশা করেছিলো, সেটি হলো বিআরআইতে অবশেষে ভারতের যোগদানের ইচ্ছা। কিন্তু ভারত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিআরআই বিরোধীদের পতাকাবাহী হিসেবে তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, উগান্ডা এবং এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করছে বলে মনে হচ্ছে। কাজেই এই ভিত্তিতে “কোন কিছুর বিনিময়ে অন্য কোন কিছু দাবি করাটা” বাস্তবে অসম্ভব।
তাহলে বর্তমান অবস্থায় ভারতের হাতে বিকল্প কী আছে? ভারতের দিক থেকে একটা বাস্তববাদী জায়গা থেকে যুক্তি দেখানো হতে পারে যে, চীনের আরেকটি ভেটো দানের নীতি জয়শ-এ-মোহাম্মদের বালাকোট ক্যাম্পে ভারতের অগ্রীম প্রতিরক্ষামূলক হামলাকে ন্যায্য প্রমাণ করে। কাউকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দেওয়ার বা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জাতিসংঘের যে প্রক্রিয়াটি রয়েছে তা আসলে ভেঙে পড়েছে এবং কেবলমাত্র বড় শক্তিধরদের স্বার্থ রক্ষা করছে।
________________________________
এশিয়া টাইমসে “Depth of China’s ties with Pakistan costs India” শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধের আংশিক বাংলা অনুবাদ। ছবি: এশিয়া টাইমস থেকে সংগৃহীত।